আরবী বছরের প্রথম মাস মুহররম। আরবী বারটি মাসের মধ্যে যে চারটি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা হারাম বা সম্মানিত বলে কুরআন শরীফ ও হাদিস শরীফ–এ ঘোষণা করা হয়েছে, মুহররম মাস হারামকৃত মাস চতুষ্টয়ের অন্যতম। আশহুরে হুরুম সন্ধদ্ধে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ )التوبة( ৩৬
“নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজেদের উপর কোন জুলুম করো না। [সূরা তাওবা : ৩৬]
সাহাবি হযরত আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবীজী বলেন,
السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ: ثَلاثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ
) أخرجه البخاري في بدء الخلق (৩১৯৭)، ومسلم في القسامة (১৬৭৯) من حديث أبي بكرة رضي الله عنه
বছর হলো বারোটি মাসের সমষ্টি, তার মধ্যে চারটি অতি সম্মানিত। তিনটি পর পর ও ধারাবাহিক তথা– জিলক্বদ, জিলহজ¦ ও মুহররম আর (চতুর্থটি হলো) জমাদিউস্ সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী– রজব।
[বোখারি:২৯৫৮,৩১৭৯, মুসলিম:১৬৭৯]
আসমান–যমীন সৃষ্টিকাল হতেই এ মাসটি বিশেষভাবে সম্মানিত হয়ে আসছে। এ মাসের ফযিলত বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন: سيد الأشهر المحرم “মুহররম মাস হচ্ছে সমস্ত মাসের সরদার।”[দাইলামী শরীফ,মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ, কাশফুল খিফা–১/৪৫৯]
এ মাসেরই দশ তারিখ অর্থাৎ ১০ই মুহররম ‘আশুরা’র দিন, মুহররম মাসের শ্রেষ্ঠতম দিন। দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। যেটি আরবী “আশারুন” শব্দ হতে উদগত, অর্থাৎ দশ, মুহররম মাসের দশম দিনটি আশুরা হিসেবে পরিচিত।
আশুরার নামকরণের ব্যাপারে উলামায়ে কিরামগণ বিভিন্ন মত পোষণ করেন। তবে অধিকাংশই বলেন, এ দিনটি মুহররম মাসের ১০ তারিখ বলেই এটার নাম ‘আশুরা’ হয়েছে। কোন কোন আলিম বলেন, আল্লাহ পাক উম্মতকে যে দশটি বুযুর্গ দিন উপহার দিয়েছেন, তন্মধ্যে আশুরার দিনটি ১০ম স্থানীয়। এ কারণেই এটার নাম ‘আশুরা’ রাখা হয়েছে। আবার কারো মতে, এই দিনটিতে যেহেতু আল্লাহ পাক স্বীয় দশজন নবীকে ১০টি ভিন্ন ভিন্ন রহমত দান করেছিলেন তাই এটার নাম আশুরা হয়েছে।
আশূরার দিনের বরকতময় ঘটনাসমূহ
সৃষ্টির সূচনা হয় এই দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনেই। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা এ দিনেই সংঘটিত হয়। প্রথম নবী হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পযর্ন্ত প্রায় সকল নবী–রসূল আলাইহিমুস সালাম এর উল্লেখযোগ্য কোনো না কোনো ঘটনা এ দিনে সংঘটিত হয়েছে। সঙ্গত কারণেই এ দিনটি সবার জন্য এক মহা আনুষ্ঠানিকতার দিন, সাথে সাথে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত হাছিল করার দিনও। এই আশুরার দিনে অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হয়েছে– যা সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো:
Øমহান আল্লাহ পাক এই মুহররমের ১০ তারিখে সৃষ্টির সূচনা করেন।
Øআশুরার দিন শুক্রবার ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।
(সৃষ্টি) মুবারক করা হয় এবং ইছমত, সম্মান ও খুছুছিয়ত এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়।Øএ দিনই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর পবিত্র ওজুদ
Øএই দিনে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম–এর দোয়া কবুল করা হয়।
Øএই দিনে হযরত ইদ্রিস আলাইহিস্ সালামকে সম্মানিত উচ্চস্থানে ও আকাশে তুলে নেয়া হয়।
Øএই দিনে হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁর সঙ্গী সাথীদের আল্লাহ পাক মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি দেন।
Øআল্লাহ পাক এদিনে হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম–এর সাথে কথা বলেন এবং তাঁর উপর তাওরাত শরীফ নাযিল করেন।
করে দেন। যার উপর দিয়ে হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁর সম্প্রদায় পার হয়ে যান। আর ফেরাউন দলবল ও সৈন্যসামন্তসহ পানিতে ডুবে মারা যায়।Øএদিনে বণী ইস্রাঈল সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ পাক সাগরের উপর দিয়ে রাস্তা
Øআল্লাহ পাক এদিনে হযরত ইউনূস আলাইহিস্ সালামকে মাছের পেট থেকে মুক্তি দেন।
Øহযরত আইয়ুব আলাইহিস্ সালামকে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর সুস্থতা দান করেন।
Øএদিনে দীর্ঘ দিন বিচ্ছেদের পর হযরত ইউসূফ আলাইহিস্ সালামকে তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম–এর কাছে ফিরিয়ে দেন।
Øআল্লাহ পাক এদিনে হযরত সোলায়মান আলাইহিস্ সালামকে তাঁর রাজত্ব বা কর্তৃত্ব দেয়ার ঘোষণা দেন।
Øআল্লাহ পাক এ দিনে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামকে আসমানে তুলে নেন।
Øএদিনে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম–এর বিলাদত শরীফ, খলীল উপাধি লাভ এবং নমরূদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তিলাভ করেছিলেন।
আলাইহিস সালাম–এর বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ব প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।Øহযরত দাঊদ আলাইহিস সালাম–এর দোয়া কবুল এবং তাঁর পুত্র হযরত সোলায়মান
এ দিনেই মহান আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম যমীনে বৃষ্টি নাযিল করেন।
এই ১০ই মুহররম আল্লাহ পাক–এর হাবীব, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর প্রিয়তম দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাত বরণ করেন, যে ঘটনা বিশ্ববাসীকে ব্যথিত ও মর্মাহত করে, তবে মুসলিম উম্মাহকে শিক্ষা দেয় ত্যাগের ও সত্যের।
সুতরাং এই পবিত্র মুহররম শরীফ মাসটি সকলের জন্যই রহমত, বরকত, সাকীনা ও মাগফিরাত হাছিল করার মাস। সেজন্যই অতীতের সকল ইমাম–মুজতাহিদ ও ওলীআল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম এই পবিত্র মুহররম মাসকে সম্মান করেছেন।
রোযা: আশুরার একটি অন্যতম আমল হচ্ছে আশুরার রোযা, অর্থাৎ ১০ই মুহররম উপলক্ষে দুটি রোযা রাখা। অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ। শুধু ১০ তারিখ রোযা রাখা মাকরূহ। কারণ এদিন ইহুদিরাও রোযা রেখে থাকে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফ–এ ইরশাদ হয়েছে,
وعن ابن عباس رضي اللَّه عنهما أيضاً ، قال: قال رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم : “صوموا يوم عاشوراء، وخالفوا فيه اليهود، صوموا قبله يوماً، أو بعده يوماً” . (أخرجه أحمد (১/২৪১)، وابن خزيمة (২০৯৫)، والبيهقي (৪/২৮৭) ، وابن عدي في “الكامل” (৩/৯৫৬)، من طريق هشيم بن بشير. وأخرجه البزار (১০৫২ – كشف الأستار) من طريق عيسى بن المختار، والطحاوي في “شرح معاني الآثار” (২/৭৮) ، من طريق عمران بن أبي ليلى ، والحميدي (১/২২৭)(ح৪৮৫) ، وعنه البيهقي (৪/২৮৭) من طريق سفيان بن عيينة. أربعتهم عن محمد بن عبدالرحمن بن أبي ليلى، عن داود بن علي ، عن أبيه علي بن عبدالله بن عباس، عن جده رضي اللَّه عنه. ولفظ عيسى بن المختار: ” صوموا قبله يوماً وبعده يوماً )” .
তোমরা আশূরা উপলক্ষে রোযা রাখো তবে ইহুদীদের খিলাফ করো। তোমরা আশূরার দিন এবং এর পূর্বে অথবা পরে আরেকটি রোযা রাখো।” অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ রোযা রাখো।
[আহমদ–১/২৪১, ইবনু খোযাইমা–২০৯৫, বায়হাক্বী–৪/২৮৭]
এ প্রসঙ্গে বুখারী ও মুসলিম এ বর্ণিত হয়েছে:
ففي صحيح مسلم عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ، فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ؟” فَقَالُوا: هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، أَنْجَىَ اللهُ فِيهِ مُوسَىَ وَقَوْمَهُ، وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ، فَصَامَهُ مُوسَىَ شُكْرًا، فَنَحْنُ نَصُومُهُ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَىَ بِمُوسَىَ مِنْكُمْ”. فَصَامَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ.اهـ
ولفظ البخاري في صحيحه: عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ فَرَأَى الْيَهُودَ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ: مَا هَذَا، قَالُوا: هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ فَصَامَهُ مُوسَى، قَالَ: فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ، فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ.اهـ
“হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন তিনি লক্ষ্য করলেন ইহুদিরা আশুরা’র দিনে রোযা পালন করতো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এই দিনে রোযা রাখার তাৎপর্য কি? তারা বললো, এই দিনটির অনেক বড় তাৎপর্য রয়েছে, আল্লাহ মূসা আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর অনুসারীদের বাঁচিয়ে ছিলেন এবং ফেরাউন ও তার অনুসারীদের ডুবিয়ে ছিলেন এবং মুসা আলাইহিস্ সালাম এই ঘটনার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ রোযা রাখতেন আর তাই আমরাও রাখি। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরো বেশি নিকটবর্তী সুতরাং তোমাদের চেয়ে আমাদের রোযা রাখার অধিকার বেশি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরা’র রোযা রাখতেন এবং অন্যদেরকে এই রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন”
[মুসলিম:৬/২৫২০. বুখারী:৫/৫৮:হাদিস–২৭৯,
বুখারী ৬/৬০: হাদীস ২০২, বুখারী; হাদীস ১৮৬৫।/
হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
فقد خرّج مسلم من حديث أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ” أَفْضَلُ الصَّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ، وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ، بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ (
রমযান শরীফের পর সবচেয়ে ফযিলতপূর্ণ রোযা হচ্ছে– মুহররম তথা আশুরার রোযা। [মুসলিম–১৯৮২]
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ ”
أخرجه مسلم (১১৬২)، وأبو داود (২/৩২১) (ح২৪২৫)، والترمذي (২/১১৫) (ح৭৪৯) ، وابن ماجة (১/৫৫৩) (ح১৭৩৮) ، وأحمد (৫/৩০৮)، والبيهقي (৪/২৮৬
“হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশূরার রোযার ফযিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “এটা বিগত এক বৎসরের গুনাহর কাফফারা স্বরূপ।”
[মুসলিম শরীফ–১১৬২]
পবিত্র আশুরার দিন পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানো
পবিত্র আশুরার দিন পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানো সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, সাইয়িদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ , أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , قَالَ : ” مَنْ وَسَّعَ عَلَى عِيَالِهِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ سَائِرَ سَنَتِهِ ” .
“যে ব্যক্তি আশুরার দিন তার পরিবারবর্গকে ভালো খাদ্য খাওয়াবে ও ভালো পরাবে আল্লাহ পাক সারা বছর তাকে সচ্ছলতা দান করবেন।”
[তাবারানী শরীফ, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী,
মা সাবাতা বিস্ সুন্নাহ, মু’মিনকে মাহ ওয়া সাল ও আ’মালী’]
পর্ব ২
তাই পবিত্র আশুরার দিন ভালো খাদ্য খাওয়া, খাওয়ানো, পরিধান করা ও পরিধান করানো মুস্তাহাব।
পবিত্র আহলে বাইতদের প্রতি সম্মান
মুসলমানদের ইতিহাসের যতগুলো হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হৃদয়বিদারক ঘটনা হলো ৬১ হিজরি সনের ১০ই মুহররম এ ঘটে যাওয়া ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনা, সাইয়িদুশ্ শুহাদা হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মুবারক শাহাদাতবরণ। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার মধ্যে রয়েছে মুসলমানদের জন্য ইবরত ও নসিহত। মাতম করে এই ঘটনার বদলা শোধ করা যাবে না। এ ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয়– মুসলমান কোনো বাতিল শক্তির কাছে হার মেনে বশ্যতা শ্বীকার করতে পারে না। মহিলা ও শিশুসহ মাত্র ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে কূফার পথে আক্রান্ত হন এক বিশাল বাহিনী দ্বারা। বীর বিক্রমে জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করে শাহাদাতের মাক্বামকে সম্মানিত করেছেন। কিন্তু নাহক্ব স্বীকার করেননি।
পবিত্র আশুরার একটি বিশেষ আমল– পবিত্র আহলে বাইতদের ছানা–ছিফত আলোচনা এবং তাঁদের খিদমত করা, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন:
ذَٰلِكَ الَّذِي يُبَشِّرُ اللَّهُ عِبَادَهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ۗ قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَىٰ ۗ وَمَن يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهُ فِيهَا حُسْنًا ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ شَكُورٌ(الشورى-২৩)
“হে আমার হাবীব! আপনি (উম্মতদেরকে) বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাই না। তবে আমার নিকটজন তথা পবিত্র আহলে বাইতদের প্রতি তোমরা সদাচরণ করবে।” [সূরা শূরা, আয়াত– ২৩]
হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র আহলে বাইতদের উদ্দেশে দোয়া করেছেন,
أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ ، قَالَ : طَرَقْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍ فِي بَعْضِ الْحَاجَةِ ، فَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُشْتَمِلٌ عَلَى شَيْءٍ لَا أَدْرِي مَا هُوَ ، فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنْ حَاجَتِي ، قُلْتُ : مَا هَذَا الَّذِي أَنْتَ مُشْتَمِلٌ عَلَيْهِ ؟ قَالَ : فَكَشَفَهُ فَإِذَا حَسَنٌ , وَحُسَيْنٌ عَلَى وَرِكَيْهِ , فَقَالَ : ” هَذَانِ ابْنَايَ وَابْنَا ابْنَتِيَ ، اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُمَا ، فَأَحِبَّهُمَا ، وَأَحِبَّ مَنْ يُحِبُّهُمَا ” . قَالَ : هَذَا حَسَنٌ غَرِيبٌ .
– (جامع الترمذي গ্ধ كِتَاب الدَّعَوَاتِ গ্ধ أبوابُ الْمَنَاقِبِ গ্ধ بَاب مَنَاقِبِ الْحَسَنِ , وَالْحُسَيْنِ رَضِيَ اللَّهُ … الترمذي ص৩২২ رقم الحديث: ৩৭৩১ و رقم ৩৮৫৮، ورواه ابن حبان، موارد الظمآن ৫৫২ الرقم ২২৩৪ والحصّرمي في وسيلة المآل ص৩২২ والسيد شهاب الدين أحمد في توضيح الدلائل في تصحيح الفضائل ص৬৯৯. عن البراء بن عازب رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم أبصر حسناً وحسيناً فقال: “اللهم إني أحبهما فأحبهما” (سنن الترمذي ج৫ ص৩২৭ رقم ৩৮৭১).
“হে মহান আল্লাহ! আমি হাসান, হুসাইন এবং তাদের আওলাদগণকে ভালোবাসি। আপনিও তাঁদেরকে ভালোবাসুন এবং যে ব্যক্তি তাঁদেরকে ভালোবাসবে তাকেও আপনি ভালোবাসুন।” [তিরমিযী শরীফ ,৩ হাদীস–৩৭৩১,৩৮৫৮]
যাঁরা তাঁদের আলোচনা, ছানা–ছিফত বর্ণনা করবে, খিদমত করবে তাদের জন্য রয়েছে মহান আল্লাহ পাক ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর খালিছ সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি।