ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় তখন এমন একটি জাতির অধিবাস ছিলো যারা বিশ্বের জাতিবর্গের মধ্যে এদিক থেকে অনন্য ছিলো যে, তাদের কাছে ধর্মের বিরাট সম্পদ ছিলো; আবার ধর্মজ্ঞান ও ধর্মগ্রন্থের ভাষা-পরিভাষা অুনধাবনের ক্ষেত্রে ছিলো সবচে প্রাগ্রসর। কিন্তু…. কিন্তু তারা ধর্ম ও সভ্যতা এবং শাসন ও রাজনীতির ক্ষেত্রে এমন কোন প্রভাবক শক্তি ছিলো না, যাতে অন্যান্য জাতির উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে, বরং বহুশতাব্দী থেকে তাদের ভাগ্যলিপিই ছিলো অন্য জাতির দাসত্ব করা এবং শোষন-নিপীড়ন, বিতাড়ন-নির্বাসন ও বিপদ-দূর্যোগের শিকার হয়ে বেঁচে থাকা। পৃথিবীর অন্যান্য জাতির মাঝে তাদের নিজস্ব ঐতিহাসিক ধারা এই ছিলো যে, একদিকে তারা দীর্ঘ দাসত্বের লাঞ্ছনা ভোগ করেছে, অন্যদিকে জাত্যাবিমান, বংশগৌরব, সম্পদলিপ্সা ও সুদখোরিতা, এগুলো তাদের মধ্যে অদ্ভুত কিছু জাতীয় স্বভাব ও চরিত্র এবং ঝোঁক ও প্রবণতা সৃষ্টি করেছে এবং এগুলো ছিলো জাতিবর্গের মধ্যে তাদের একক বৈশিষ্ট্য। যুগ ও প্রজন্মপরম্পরায় তাদের জাতীয় পরিচয়। দূর্বলতা ও পরাজয়কালে আত্মসমর্পন ও পদলেহন, আর শক্তি ও বিজয়ের সময় নীচতা ও নিষ্ঠুরতা। তদ্রূপ কপটতা, প্রতারণা, নির্দয়তা, স্বার্থপরতা ও সম্পদ আত্মসাৎ এবং সত্যের পতের অন্তরায় সৃষ্টি করা, এগুলো ছিলো তাদের স্বভাবদোষ। হ্যাঁ, এতক্ষণ যাদের কথা বললাম, আলকোরআনের ভাষায় তারা হলো অভিশপ্ত ইহুদীজাতি। যষ্ঠ ও সপ্তম শতকে তারা চারিত্রিক অধঃপতন, নৈতিক অবক্ষয়, মানুষ্যত্বহীনতা ও সামষ্টিক নষ্টাচারের যে চরম স্তরে উপনীত হয়েছিলো এবং যে কারণে মানব-জাতির নেতৃত্বের মর্যাদাপূর্ণ আসন থেকে তাদের অপসারণ ঘটেছিল, তার এক সূক্ষ্ম নিখুঁত বিবরণ আলকোরআন আমাদের সামনে তুলে ধরেছে।১ ষষ্ঠ শতকের শেষভাগে এবং সপ্তম শতাব্দীর সূচনাপূর্বে এমন কিছু ঘটনা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি উদ্ভব হয়েছিলো, যার ফলে ইহুদী ও খৃস্টসম্প্রদায়ের মধ্যে ঘৃণা-বিদ্বেষ এমন স্তরে পৌছেঁছিলো যে, পরস্পরের বিনাশসাধন ও প্রতিশোধ গ্রহণের কোন সুযোগ হাতছাড়া করতে তারা প্রস্তুত ছিলো না। একদল যকন বিজয় ও আধিপত্য লাভ করতো তখন পরাজিত জনগোষ্ঠির সঙ্গে এমনই অমানবিক ও পৈশাচিক আচরণ তারা করতো যা বিশ্বাস করা সত্যি কঠিন।
সম্রাট ফোকাসের রাজত্বের শেষ বছর (৬১০খৃঃ) ইহুদীরা এন্টাকিয়ায় খৃস্টানদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দাঙ্গাবাজি শুরু করলে সম্রাট তার সেনাপতি বোনোসাসকে বিদ্রোহদমনের দায়িত্ব দয়ে পাঠালেন। আর সেনাপতি চরম নিষ্ঠুরতার সঙ্গে ইহুদীনিধনে মেতে ওঠেন, হয় তলোয়ারের লোকমা বানিয়ে, ফাসিঁর দড়িতে ঝুলিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে এবং পানিতে ডুবিয়ে, এমনকি হিংস্র পশুর মুখে নিক্ষেপ করে।
উভয় সম্পদায়ের মধ্যে এই নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার পালাবদল হতো এবং যখন যারা জয়ী হতো, পাশবিকতা ও নির্মমতায় অন্যকে ছাড়িয়ে যেতো। রোমান সম্রাট ফোকাসের শাসনামলে, ৬১৫ খৃস্টাব্দে ইরানীরা যখন শাম (সিরিয়া, জর্দান ও ফিলিস্তীনের বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড) জয় করলো তখন ইহুদীদেরই প্ররোচনায় সম্রাট খসরু খৃস্টানদের উপর পাশবিকতা ও বর্বরতার চূড়ান্ত করে ছাড়েন। তিনি তাদের এমন কচুকাটা করেন যে, খুব কমসংখ্যক খৃস্টানই ইরানী তলোয়ার থেকে রক্ষা পেয়েছিলো। এমনকি তিনি তাদের মিশর পর্যন্ত ধাওয়া করে হত্যাযজ্ঞ চালান, আর দাসরূপে বন্দী করেন বেশুমার। বিজয়ী বাহিনীর চত্রচ্ছায়ায় ইহুদীরা তখন বহুমাঠ ও গীর্জা যেমন ধ্বংস করেছে তেমনি নির্বিচারে তাদের ঘর বাড়ী জ্বালিয়েছে। পরে যখন রোমক বাহিনী ইরানীদের উপর জয়লাভ করে তখন পরিশোধ স্পৃহায় উন্মক্ত খৃস্টানদের দাবীর মুখে সম্রাট হিরাক্লিয়াস এমন হত্যাযজ্ঞে মে ওঠেন যে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া বা আত্মপোগন করা ইহুদীরাই শুধু জানে বেঁচেছিলো।২
উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকেই বোঝা যায়, সপ্তম শতকে ইহুদী-খৃস্টান দুই ধর্মসম্প্রদায় নৃশংসতা, বর্বরতা ও বিনাশ-উন্মাদনার কোন ভয়াবহ স্তরে পৌছেঁছিলো। আর বলাবাহুল্য, এমন মানবতাবর্জিত ও পাশবিক চিরত্রের কোন জাতির পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয় যে, পৃথিবীকে তারা ন্যায় ও সত্যের এবং ইনছাফ ও শান্তির বার্তা শোনাবে এবং তাদের শাসন-ছায়ায় মানবসভ্যতা সুখী-সমৃদ্ধ হবে।
Awesome post! Keep up the great work! 🙂
Great content! Super high-quality! Keep it up! 🙂