ইউরোপের উত্তর-পশ্চিম জনপদে যেসব জাতির বসবাস ছিলো, এককথায় তারা ছিলো অজ্ঞতা ও মূর্খতার ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত এবং ছিলো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ-বিগ্রহে বিপর্যস্ত। জ্ঞান ও সভ্যতার ঊষার আলো তাদের ভাগ্যাকাশে উদিত হতে তখনো অনেক দেরী। কেননা দূর্ভাগা ইউরোপের মানচিত্রে তখনো আমাদের ‘উন্দুলুস’-এর অভ্যূদয় ঘটেনি, ইউরোপকে যারা জ্ঞান ও বিজ্ঞানের আলো উপহার দিয়েছিলো এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে এনেছিলো। যুগের বিভিন্ন দুর্যোগ এবং ইতিহাসের ঝড়ঝাপটা, যা কোন জাতিকে ঘোর থেকে জাগিয়ে তোলে এবং এগিয়ে চলার যোগ্যতা দান করে তাও ছিলো তাদের জাতীয় জীবনে অনুপস্থিত। তারা শুধু ক্ষতবিক্ষত ছিলো খুনাখুনি, হানাহানি ও রক্তক্ষয়ী গৃহ যুদ্ধে। মানবসভ্যতার চলমান কাফেলার যে রাজপথ, তা থেকে তারা ছিলো দূরে বহু দূরে। সমকালীন পৃথিবী সম্পর্কে তারা ছিলো প্রায় অজ্ঞ; পৃথিবীও বলতে গেলে জানতো না তাদের কোন খবর। প্রাচ্য ও প্রতিচ্যের বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন জনপদে ইতিহাসের মোড় পরিবর্তক যে সকল ঘটনা ঘটছিলো সেগুলোর সঙ্গে তাদের না ছিলো কোন যোগ, না ছিলো যোগাযোগ। চিন্তা ও বিশ্বাসের দিক থেকে তারা ছিলো নবীন খৃস্টধর্ম ও প্রাচীন মূর্তিপূজার মাঝামাঝি অবস্থানে। ধর্ম ও ধর্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে যেমন তাদের কাছে কোন বাণী ও বার্তা ছিলো না, তেমনি রাজ্য ও রাজনীতির ক্ষেত্রেও ছিলো না নিজস্ব কোন ব্যবস্থা ও দর্শন। এইচ, জি, ওয়েলস যেমন বলেছেন, ‘পশ্চিম ইউরোপে তখন একতা ও ঐক্য এবং আইন ও শৃঙ্খলার চিহ্নমাত্র ছিলোনা।১
বরার্ট ব্রিফল্ট (robert briffault) বলেন-
‘পঞ্চম শতক থেকে দশম শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপ ছিলো অন্ধকারে আচ্ছন্ন এবং ক্রমশ তা ঘোর থেকে ঘোরতর হয়ে চলেছিলো। সে যুগের পাশবিকতা ও বর্বরতা ছিলো আদি যুগের চেয়ে অনেক ভয়াবহ। যেন পচনধরা সভ্যতার লাশ পচেই চলেছে। যা কিছু ভালো সব মুছে যাচ্ছে এবং ধ্বংস ও বিলুপ্তি অবধারিত হয়ে পড়েছে। যে সকল সমৃদ্ধ জনপদে ঐ সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিলো এবং একসময় চরম উন্নতি লাভ করেছিলো, যেমন ইতালি ও ফ্রান্স, সেগুলো তখন হয়ে পড়েছিলো গোলযোগ, নৈরাজ্য ও বরবাদির শিকার।’২