কুরাইশদের সব ধরনের প্রলোভন এবং নবী করীম (সাঃ) এর উত্তর

কাফের কুরাইশরা যখন দেখল যে, তাদের এ প্রচেষ্টাও কোনো ফল দিচ্ছে না, তখন তারা সবাই মিলে পরামর্শ করে এ সিদ্ধান্ত নিল যে, তারা তাদের সবচেয়ে চতুর সর্দার উতরা ইবনে রাবিআ’কে নবী করীম (সাঃ) এর নিকট পাঠাবে। সে এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সব ধরনের পার্থিব লোভনীয় বস্তুর প্রলোভন দেকাবে। হয়তো এ ব্যবস্থায় তিনি তাঁর দাওয়াত থেকে নীরবতা অবলম্বন করবেন।

উতবা ইবনে রবিআ’ নবীজীর দরবারে এসে উপস্থিত হলো। নবী করীম (সাঃ) তখন মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। সে নবীজীর নিকটে গিয়ে বলল, “ভাতিজা! তুমি বংশমর্যাদা ও সম্ভ্রান্ততায় আমাদের সবার চেয়ে উত্তরম। তা সত্ত্বেও তুমি তোমার লোকজনের মধ্যে বিরোধ ও মতভেদ সৃষ্টি করে ফেলেছ। তুমি তাদের দেব-দেবীকে এবং তাদের নিজেদেরকে নানা রকম ভালো-মন্দ বলছ। তাদেরকে এবং তাদের পিতৃপুরুষকে মুর্খ ও বোকা বলছ। তুমি আজ সত্যি করে তোমার মনের কথাটি বলতো! তোমার এসব কর্মকাণ্ডের মূলে উদ্দেশ্য যদি এই থাকে যে, তুমি অনেক ধন-দৌলত সঞ্চয় করবে, তাহলে শোন! আমরা তোমার জন্য এ পরিমাণ ধন-সম্পদ যোগাড় করে দিতে প্রস্তুত আছি যে, তুমি মক্কার সকলের চেয়ে অধিক বিত্তের অধিকারী হয়ে যাবে। যদি তোমার উদ্দেশ্য এই হয় যে, তুমি নেতা হবে, তাহলে আমরা সবাই তাতে রাজি আছি। আমরা তোমাকে কুরাইশদের সকল গোত্রের নেতা বানিয়ে দেব এবং তোমার হুকুম ছাড়া একটি কথাও এদিক ওদিক হবে না। তোমার যদি এই ইচ্ছা হয় যে, তুমি আমাদের বাদশাহ হবে, তবে আমরা সাবই মিলে তোমাকে আমাদের বাদশাহও মেনে নিতে পারি। আর যদি (নাউযুবিল্লাহ) তোমার উপর কোনো দুষ্ট জিনের আছর হয়ে থাকে। আর ঐ দুস্ট জিনের কথাবার্তাই (ওহী) তুমি মানুষকে শোনাও এবং তুমি একা সেটাকে তাড়াতে পারছ না, তাহলে আমরা তোমার জন্য কোনো চিকিৎসক খুঁজে দেখি যে, তোমার সুচিকিৎসা করে তোমাকে সুস্থ্য করে তুলবে।” -[সীরাতে মুগলতাই, পৃষ্ঠা-২০]

যখন উতবা তার কথা বলা শেষ করল, তখন নবী করীম (সাঃ) তার সকল কথার উত্তরে শুধু কুরআন শরীফের একটি সূরা পড়ে তাকে শুনিয়ে দিলেন, যা শুনে উতবা একেবারে অভিভূত হয়ে গেল। সে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে এসে বলতে লাগল, “আল্লাহর কসম! আজ আমি এমন কিছু কথা শুনেছি, যা আমি এর পূরে্ব জীবনে কখনো শুনিনি। আল্লাহর কসম! এগুলো কোনো কবিতা নয়, গণকদের কোনো মন্ত্রও নয়, কোনো জাদুও নয়।”

“আমার মত হচ্ছে, তোমরা সাবই এ লোকটিকে (নবী করীম (সাঃ) কে) কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাক। কেননা, তার যে, ‘বাণী’ আমি শুনেছি, আল্লাহর কসম!  তার সুমহান মর্যাদা অচিরেই প্রকাশ পাবে। আমি তোমাদের মঙ্গল কামনা করি, তোমরা আমার কথা শোনো, মানো এবং বেশিদিন নয়, অল্প কিছুদিনই অপেক্ষা করো। যদি আরবের লোকেরা বিজয়ী হতে পারে, তাহলে তো বিনা পরিশ্রমেই এ কষ্ট থেকে রেহাই পেলে। অন্যদিকে যদি সে আরববাসীর উপর বিজয় লাভ করে, তাহলে তো তার সম্মানে আমাদেরই সম্মান মিলবে। কারণ যে, তো আমাদের গোত্রেরই লোক।”

কুরাইশরা তাদের সবচেয়ে চতুর সর্দারের এ বক্তব্যে আশ্চর্য হয়ে গেল এবং এই বলে নিজেদের জান বাঁচাল যে, মুহাম্মদ (সাঃ) নিশ্চয় তাকে জাদু করে ফেলেছে।  -[ দুরুসুস সীরাত, পৃষ্ঠা-১৪]

যখন কুরাইশদের কোনো কৌশলই কাজে লাগল না, তখন তারা রাসূলে মাকবুল (সাঃ) এর সাথে সাথে তাঁর সাহাবী, তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনের উপরও অত্যাচার এবং তাদেরকে নানাভাবে কষ্ট দিতে শুরু করল। হযরত বিলাল (রা.) ও আরো অনেককে ভীষণভাবে কষ্ট দেওয়া হলো, হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসি (রা.) এর মাতাকে শুধুমাত্র এ কারণেই অত্যন্ত নির্দয়ভাবে শহীদ করা হলো। এটাই প্রথম শহীদ হওয়ার ঘটনা, যা ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত হলো।  -[সীরাতে মুগলতাই, পৃষ্ঠা-২১]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: দয়া করে কপি করা থেকে বিরত থাকুন, ধন্যবাদ।