রোমান সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ছিলো চরম। একদিকে সাধারণ মানুষের জীবন ছিলো বিপদ-সমস্যায় জর্জরিত, তার উপর চাপানো হচ্ছিলো নিত্য-নতুন করের বোঝা। এর মধ্যে বিপদের উপর বিপদ ছিলো লাগামহীন শোষণের হাতিয়াররূপে ইজারাদারি ও সম্পদ বাজেয়াপ্তির ব্যবস্থা। ফলে প্রজা সমাজে শাসকদের বিরুদ্ধে ধূমায়িত হয়ে উঠেছিলো আক্রোশ ও তীব্র অসন্তোষ। এমনকি স্বদেশী শাসকদের চেয়ে যে কোন বিদেশী শাসন তাদের কাছে অধিক কাম্য হয়ে উঠেছিলো। এসব কারণে ব্যাপক গোলযোগ ও বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিলো। ৫৩২ খৃস্টাব্দের এক দাঙ্গা-গোলযোগে শুধু রাজধানীতেই নিহত হয়েছিলো ত্রিশহাজার মানুষ। (লক্ষ্য করুন, তৎকালীন জনসংখ্যার বিচারে ত্রিশ হাজার মানুষ!)১
সময় ও পরিবেশ-পরিস্থিতির বিচারে জীবনের সর্বক্ষেত্রে তখন কঠোর মিত-ব্যয়িতা্ই ছিলো কাম্য, অথচ সীমাহীন অপচয় ও অপব্যয়ই ছিলো সাধারণ প্রবণতা। নৈতিক অধঃপতনের এমন চূড়ান্ত হয়েছিলো, যেখানে মানুষে আর পশুতে কোন পার্থক্য থাকে না। সবার তখন একটাই চিন্তা, একটাই নেশা, যেভাবে পারো, সম্পদ অর্জন করো এবং সর্বউপায়ে প্রবৃত্তির চাহিদা পূর্ণ করো। মানবিক মূল্যবোধ বিলীন হয়ে গিয়েছিলো এবং চারিত্র ও নৈতিকতার ভিত ধ্বসে পড়েছিলো। এমনকি অবাধ যৌনসম্ভোগের লালসায় মানুষ পারিবারিক ও বৈবাহিক বন্ধন থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছিলো।২ ন্যায় ও সুবিচার, শেলের ভাষায়, বাজারের পণ্যের মত বেচা-কেনা হতো। ঘুষ ও দূর্নীতি এবং খেয়ানত ও দুষ্কৃতি পেয়েছিলো সামাজিক উৎসাহ।৩
ঐতিহাসিক গন বলেন-
‘ষষ্ঠ শতকের শেষ দিকে রোমান সাম্রাজ্য পতন ও অধঃপতনের একেবারে শেষ ধাপে পৌঁছে গিয়েছিলো। এ যেন সেই বৃক্ষ, একসময় যা ছিলো সবুজ বিস্তৃত এবং যার ছায়া ছিলো বিশ্বের সকল জাতির আশ্রয়, কিন্তু এখন আছে শুধু তার কাণ্ড, যা দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে।’৪ হিস্টোরিয়ানস হিস্টোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড এর লেখকমণ্ডলী বলেন-
‘বড় বড় নগর-জনপদ, যা দেখতে বিরান হয়ে পড়েছিলো এবং কখনো আর নিজের হৃত গৌরব ও হারানো জৌলুস ফিরিয়ে আনতে পারেনি, সেগুলো এ সাক্ষ্যই দেয় যে, বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য তখন চরম অবক্ষয় ও অরাজকতার শিকার হয়ে পড়েছিলো এবং এর কারণ ছিরৈা মাত্রারিক্ত কর ও রাজস্ব আরোপ, ব্যবসা-বাণিজ্যের অবনতি, কৃষি ও চাষাবাদে অবহেলা এবং পরিণতিতে বসতি ও জনপদ ধীরে ধীনে কমে আসা।’ ৫