কা’বাঘর নির্মাণ এবং কুরাইশদের সর্বসম্মতিতে নবীজী (সাঃ) কে আল-আমীন মেনে নেওয়া

নবী করীম (সাঃ) এর বয়স যখন পঁয়ত্রিশ বছর, তখন কুরাইশরা কা’বাঘর নূতনভাবে নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।(১) আল্লাহর ঘর কা’বা শরীফ নির্মাণে অংশ নেওয়াকে প্রতিটি ব্যক্তিই নিজের সৌভাগ্য বলে মনে করত। কুরাইশ বংশের সবগুলো শাখা নির্মাণ কাজে অধিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের সৌভাগ্যের ফয়সালা করে রেখেছিল। ফলে এ নির্মাণ কাজটি গোত্রগুলোর মাঝে ভাগ-বন্টন করে দেওয়ার প্রশ্র উঠল, যেন এ নিয়ে কোনো ঝগড়া-বিবাদ না বাঁধে। এভাবে কার্যবন্টনের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) বসানোর স্থান পর্যন্ত সুসম্পন্ন হয়ে গেল। কিন্তু এখন হাজরে আসওয়াদটিকে উঠিয়ে ভবন-গাত্রে স্থাপনের বিষয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিল। প্রতিটি গোত্র এবং লোকের আন্তরিক ইচ্ছা ছিল, সে এ সৌভাগ্যের অধিকারী হবে। এমনকি মারামারি, খুনাখুনির প্রতিজ্ঞা পর্যন্ত হতে লাগল। এ অবস্থায় সমাজের চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি আপস-মীমাংসায় উপনীত হওয়ার ইচ্ছায় মসজিদে একত্র হলেন। আলাপ-আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, আগামীকাল ভোরে যে লোক মসজিদের এ দরজা দিয়ে সর্বপ্রথম আসবে, সে তোমাদের এ সমস্যার সমাধান দিবে। তোমরা সবাই তার আদেশ- নির্দেশকে খোদায়ী বিধান মনে করে মাথা পেতে নেবে। আল্লাহর কি অপার মহিমা! দেখা গেল সর্বপ্রথম এ দরজা দিয়ে যিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন। তিনি নবী করীম (সাঃ)। তাকেঁ আসতে দেখে সকলেই একবাক্যে বলে উঠলেন, “এ যে আল-আমীন, আমরা তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি আছি।” নবী করীম (সাঃ) এসে এমন বিচক্ষণতার সাথে সমস্যার সমাধান করলেন যে, সকলেই তাতে খুশি হয়ে গেল। তিনি একটি চাদর বিছিয়ে দিলেন এবং তাতে নিজের হাতে হাজরে আসওয়াদটিকে এনে রাখলেন। এরপর বললেন, প্রতিটি গোত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ চাদরটির এক-একটি কোণে ধরে নিয়ে আসুন। এমনই করা হলো। যখন ভবনের নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে আসা হলো, তখন নবী করীম (সাঃ) নিজের হাতে পাথরটিকে উঠিয়ে যথাস্থানে লাগিয়ে দিলেন। ইবনে হিশাম এ ঘটনা বর্ণনা করার পর লিখেছেন, “নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে সমগ্র কুরাইশ সম্প্রদায় নবী করীম (সাঃ) কে ‘আল-আমীন’ (বিশ্বাসী) বলে সম্বোধন করত। -[সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১০৫]
<style=”font-size: 10pt;”>১. এর পূর্বে প্রথমে হযরত শীছ (আ.) এবং এরপর হযরত ইবরাহীম (আ.) কা’বা নির্মাণ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *