হযরত হালীমা সা\’দিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, যে সময় আমি রাসূলে মাকবুল (সাঃ) এর দুধ ছাড়ালাম, তখন তাঁর পবিত্র মুখে এ ক\’টি কথা উচ্চারিত হলো-
اَللّٰہُ اَکْبَرْ کَبیرًا وَّ الحَمْدُ لِلّٰہِ حَمْدً کَثِیرًا وَّ سُبْحَانَ اللّٰہِ بَکْرَ ۃً وَّ اصِیلاً
\”আল্লাহ সব চেয়ে বড় ও মহান, আল্লাহর জন্যই প্রচুর প্রশংসা এবং সকাল-সন্ধ্যা সর্বদাই আল্লাহ তা\’আলা ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে পবিত্র।\” এটিই নবী করীম (সাঃ) এর প্রথম কথা। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত এ হাদীসটি ইমাম বায়হাকী তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন। [খাসায়েসে কুবরা, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৫]
নবী করীম (সাঃ) এর দৈহিক বৃদ্ধি অন্য সকল শিশুর চাইতে অধিক ছিল। তাই, দু\’বছর বয়সেই তাঁকে বেশ হৃষ্টপুষ্ট দেখাতে লাগল। তখন আমরা প্রচলিত নিয়ম অনুসারে তাঁকে তাঁর মায়ের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে গেলাম। কিন্তু তাঁর নানাবিধ বরকতের কারণে তাঁকে ছেড়ে আসার মোটেই ইচ্ছা করছিল না। ঘটনাক্রমে সে বছর মক্কায় মহামারি ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরা সে মহামারির অজুহাত দেখিয়ে তাঁকে আবার আমাদের সাথেই নিয়ে এলাম।
শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) আমাদের কাছে থাকতে লাগলেন। তিঁনি বাইরে যেতেন ও ছেলেদের খেলাধুলা করতে দেখতেন, কিন্তু নিজে খেলতেন না। চুপচাপ ও একাকী থাকতেন। একদিন আমাকে বললেন, আমার অন্য ভাইটিকে সারাদিনই দেখতে পাই না, সে দিনভর কোথায় থাকে? আমি বল্লাম, সে ছাগল চরাতে যায়। তিনি বললেন, আমাকেও তাঁর সাথে পাঠাবেন। (১) এরপর থেকে তিঁনি তাঁর দুধবাই আব্দুল্লাহ এর সাথে মাঠে যাওয়া আসা করতেন। [খাসায়িসে কুবরা, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৫]�
একদিন তাঁরা দু\’ভাই মাঠে বকরি চরাচ্ছিলেন। এমন সময় আব্দুল্লাহ হাঁপিয়ে দৌড়ে বাড়িতে এসে উপস্থিত হলো এবং তাঁর পিতাকে বল্ল, \”আমার কুরাইশী ভাইকে দু\’জন সাদা পোশাক পরিহিত লোক এসে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে পেট ফেঁড়ে দিয়েছে।আমি তাদেরকে এ অবস্থাতেই রেখে এসেছি।\” আমরা স্বামী-স্ত্রী দু\’জনই ঘাবড়ে গেলামও মাঠে দিকে দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি, তিঁনি বসে আছেন, তবে ভয়ে তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে আছে। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, বাবা, তোমার কি হয়েছে? উত্তরে তিঁনি বল্লেন, দু\’জন সাদা পোশাকধারী লোক আমার কাছে এসে আমাকে ধরে মাটিতে শুইয়ে দিলেন এবং পেট কেটে তাতে কিছু খুঁজে বের করে তা বাইরে নিয়ে এলেন। সেটা কি তা আমি বলতে পারব না। আমরা তাকে ঘরে নিয়ে এলাম। (২)
এরপর আমি তাঁকে এক গণকের কাছে নিয়ে গেলাম।(৩) সে শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) কে দেখামাত্র নিজ আসন থেকে উঠে দাঁড়াল, তাঁকে নিজের বুকে তুলে নিল এবং চিৎকার করে বলতে শুরু করল, \”হে আরববাসী! তাড়াতাড়ি এখানে চলে এসা! যে বিপদ অচিরেই তোমাদের উপর ঘনিয়ে আসছে, তা প্রতিহত কর। তা এভাবে যে, তোমরা এ শিশুটিকে হত্যা করে ফেল এবং সেই সাথে আমাকেও মেরে ফেল। যদি তোমরা তাঁকে বাঁচিয়ে রাখ, তাহলে জেনে রেখ! এ ছেলে তোমাদের ধর্ম নিশ্চিহ্ন করে দেবে এবং তোমাদের এমন ধর্মের প্রতি আহ্বান জানাবে, যার কথা তোমরা আগে কখনো শোননি।\”
হযরত হালীমা সা\’দীয়া (রা.) একথা শুনে রেগে-বিরক্তিতে দাঁড়িয়ে গেলেন, শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) কে ঐ হতভাগার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বললেন, \”তুই তো পাগল হয়ে গেছিস, তোর নিজের মাথারই চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।\” এরপর হযরত হালীমা (রা.) তাঁকে নিয়ে ঘরে চলে এলেন। কিন্তু এ দ্বিতীয় ঘটনাটি রাসূলে মাকবুল (সাঃ) কে তাঁর মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিতে হযরত হালীমাকে উদ্বুদ্ধ করল। কেননা, এখানে রেখে তিনি তাঁর হেফাজতের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছিলেন না। -[শাওয়াহিদুন নুবুওয়াত- মাওলানা জামী, খাসায়িসে কুবরা, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৫]
যখন বিবি হালীমা (রা.) মক্কায় পৌঁছে শিশু মুহাম্মদ (সা.) কে তাঁর মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিলেন, তখন মা আমিনা বিবি হালীমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এত আগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার পর এত তাড়াতাড়ি আবার ফিরিয়ে আনার কারণ কি? বারবার এ প্রশ্ন করার পর বিবি হালীমা সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত বলতে বাধ্র হলেন। বিবি আমিনা সকল ঘটনা শোনার পর বল্লেন, নিঃসন্দেহে আমার ছেলের বিশেষ মাহাত্ম্য ও মর্যাদা রয়েছে। এরপর মা আমিনা বিবি হালীমাকে তার গর্ভকালীন এবং প্রসবকালীন অলৌকিক ও বিস্ময়কর ঘটনাগুলো শোনালেন। -[ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা-১০৯]
(১) নবী করীম (সাঃ) এর শৈশবকালেই এ ধরনের সাম্য চেতনা যে, \”আমার ভাই কাজ করছে, তাহলে আমি কেন করব না\” খুবই লক্ষণীয়।
(২) সীরাতে ইবনে হিশাম যাদুল মা\’আদের টীকা, পৃষ্ঠা-৮৮ হতে ৮৯।
(৩) ইসলামের পূর্বে কিছু লোক জিন ও শয়তানের সাহায্যে আসমানি খবর এবং গোপন কথাবর্তা জেনে নিজেদেরকে অদৃশ্য বিষয়ের খবরের অধিকারী বলে দাবি করত, এদের গণক বলা হয়।