সে সময় মক্কা নগরীতে খাদীজা (রা.) ছিলেন প্রচুর ধন-সম্পদের অধিকারিণী। সেই সাথে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী এবং অভিজ্ঞ মহিলা। তিনি যে সকল দরিদ্র লোককে বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ এবং বিশ্বাসী বলে জানতেন, তাদের হাতে নিজ সম্পদ তুলে দিয়ে বলতেন, \”অমুক জায়গায় গিয়ে এগুলো বিক্রয় করে এসো, এর লাভ থেকে তোমাদের এ পরিমাণ দেওয়া হবে।\”
যদিও তখনো পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নবুয়তের প্রকাশ ঘটেনি, তবুও তাঁর বিশ্বস্ততা ও সততার কথা সকলের মধ্যে বে প্রচারিত ছিল। সবাই তাঁর উন্নত ও উচ্চ চারিত্রিক গুণাবলিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিত। তিনি \’আল-আমীন\’ বা বিশ্বাসী উপাধিতে খ্যাত ছিলেন। এ খ্যাতি ও উচ্চ মর্যাদার কথা খাদীজার অজানা ছিল না। তাই বিবি খাদীজা চাচ্ছিলেন, নবী করীম (সাঃ) এর নিকট তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্য সঁপে দিয়ে নবীজীর সততা ও বিশ্বস্ততা দ্বারা তিনি লাভবান হবেন। তাই খাদীজা রাসূলে মাকবুল (সাঃ) এর নিকট বলে পাঠালেন, যে \”যদি আপনি আমার ব্যবসার পণ্য সিরিয়ায় নিয়ে যান, তাহলে আমি আমার এক ক্রীতদাসকে আপনার খেদমত করার জন্য আপনার সাথে দেব এবং অন্য লোকদের যে পরিমাণ লভ্যাংশ দেওয়া হয়, আপনাকে তার চাইতে বেশি দেওয়া হবে।\”
যেহেতু নবী করীম (সাঃ) এর ব্যক্তিসত্তা ছিল উঁচু সাহস এবং প্রশস্ত ধ্যান ধারণার অধিকারী। তাই তিনি প্রস্তাব আসার সাথে সাথেই এ দূর সফরের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। খাদীজা (রাঃ) এর ক্রীতদাস মায়সারাহকে সাথে নিয়ে ১৬ জিলহজ সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলেন। তিঁনি সেখানে এ ব্যবসা-পণ্য অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে অনেক বেশি মুনাফা সহকারে বিক্রয় করলেন এবং সিরিয়া থেকে অন্য কিছু পণ্য কিনে মক্কায় ফিরে এলেন। মক্কায় ফিরে এস তিঁনি সেই পণ্য সামগ্রী খাদীজার নিকট সোপর্দ করে দিলেন। খাদীজা সেসব মাল এখানে বিক্রয় করলে প্রায় দ্বিগুণ লাভ অর্জিত হলো। সিরিয়ায় যাওয়ার পথে একস্থানে নবী করীম (সাঃ) থেমে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সেখানে \’নাস্তুরা\’ নামক এক ইহুদি পণ্ডিত ও সন্নাসী নবীজীকে দেখতে পেল। শেষ নবীর যে সকল নিদর্শন পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবগুলোতে লেখা রয়েছে, নবী করীম (সাঃ) এর মাঝে সেসব নিদর্শন দেখতে পেয়ে নাসতুরা নবী করীম (সাঃ) কে শেষ নবী হিসেবে চিন্তে পারল। সন্নানী মায়সারাহকে আগে থেকেই চিন্ত। সে মায়সারাহকে জিজ্ঞাসা করল, তোমার সাথে এ লোকটি কে? মায়সারাহ উত্তর দিল, মক্কার অধিকাসী কুরাইশ বংশের এক সম্ভ্রান্ত যুবক। তখন সন্নাসী বলল, এ লোক ভবিষ্যতে নবী হবেন।
-[সীরাতে মুগলতাই, পৃষ্ঠা-১১]