প্রার্চের রোমান সাম্রাজ্যে২৪ ট্যাক্সের বোঝা এতই দুর্বহ হয়ে পড়েছিল যে, দেশের গণমানুষ আপন হুকুমতের মোকাবেলায় বিদেশী শাসনকে প্রাধাণ্য দিতে শুরু করেছিল। বারবার বিপ্লব ও বিদ্রোহ দেখা দিত। কেবল ৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে একটি দাঙ্গায় কনস্টাটিনোপলের তিরিশ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।২৫ তাদের রাত দিনের সবচেয়ে বড় ভাবনা ও আকর্ষণই ছিল যে, কোন উপায়েই হোক, সম্পদ অর্জন, এরপর অর্জিত সম্পদে আমরা-আয়েশ ও বিলাসী জীবন যাপনে ব্যয় করা। ক্রীড়া-কৌতুক ও চিত্ত বিনোদনের মাঝে তারা এত দূল অগ্রসর হয়েছিল যে, তারা অন্ধত্ব ও বর্বরতার স্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল।২৬
Civilization: Past and Present নামক গ্রন্থের লেকক বায়যান্টাইন সমাজের এই অদ্ভুত বৈপরীত্য, নৈতিক অরাজকতা ও চারিত্রিক বিপর্যয়, খেল-তামাশাপ্রিয় স্বভাব ও চিত্ত বিনোদনপ্রীতির ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে লিখেছেন,
\”বায়যান্টাইনীয় সমাজ জীবনে বিরাট বৈপরীত্য পাওয়া যেত। ধর্মীয় ঝোঁক তাদের মন-মন্তিষ্কে গভীরভাবে ঢুকে গিয়েছিল। দুনিয়া বর্জন ও বৈরাগ্যবাদে সাম্রাজ্যের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছিল এবং সাধারণ স্তরের একজন নাগরিকও গভীরতর ধর্মীয় আলোচনায় উৎপাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করত। এরই সাথে সর্বসাধারণের দৈনন্দিন জীবনের ওপর লুকিয়ে রাখার ইচ্ছা ও গোপনীয়তার ছাপ লেগেছিল। কিন্তু এর বিপরীতে এই সব লোকই আবার সর্বপ্রকার খেল-তামাশার প্রতি অস্বাভাবিক রকম আগ্রহীও ছিল।
সার্কাসের ছিল বিশাল ময়দান যেখানে একই সঙ্গে আশি হাজার দর্শক বসতে পারত। এখানে রথের বিরাট দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। জনসাধারণকে \’নীল\’ ও \’হরিৎ\’ দুই গ্রুপে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। বায়যান্টাইনীয়দের মধ্যে রূপ ও সৌন্দর্যের প্রতি ভালবাসাও ছিল, আবার জুলুম-নিপীড়ন, মালিন্য ও কদর্যতার প্রতি আকর্ষণ ছিল। তাদের ক্রীড়া-কৌতুক অধিকাংশ সময় রক্তাক্ত ও কষ্টদায়ক হতো। তাদের যন্ত্রণা ও কষ্ট ভয়ানক ও ভীতিপ্রদ হতো এবং তাদের বিশিষ্ট লোকদের (Elites) জীবনে ছিল আনন্দ-আয়েশ, ষড়যন্ত্র, লৌকিকতা ও যাবতীয় মন্দের জগাখিচুড়ি।২৭
মিসর ছিল (প্রাচুর্যের অধিকারী বায়যান্টাইন সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ) ভয়ানক ধর্মীয় নিপীড়ন ও নিকৃষ্টতম রাজনৈতিক জোর-যবরদস্তির শিকার এবং এরই সাথে সাথে বায়যান্টাইন সাম্রাজ্যের প্রাচুর্যের এক বিরাট মাধ্যম ছিল, ছিল এর উৎসও। এর উদাহরণ ছিল সেই গাভীর মত যাকে বেশ ভালভাবে দোহন করা হবে বটে, কিন্তু খোরাজ দেয়া হবে স্বল্প থেকে স্বল্পতর পরিমাণ।২৮
সিরিয়া ছিল বায়যান্টাইন সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় প্রদশ। এ ছিল রোমকদের সম্প্রসারণশীল ও সাম্রাজ্যলিপ্সু মানসিকতার শিকার, যেখানে কেবল শক্তির জোরে বিদেশীদের মতই শাসনক্ষমতা চালান হতো এবং শাসিত প্রজাবর্গ কখনও স্নেহ ও ভালবাসার মুখ দেখতে পেত না। দরিদ্রের অবস্থা ছিল, অধিকাংশ সিরিয়াবাসী তাদের ঋণ পরিশোধের জন্য তাদের শিশু সন্তানদেরকে বিক্রয় করতে বাধ্য হতো। বিভিন্ন রকম জুলুম-নির্যাতন, অধিকার হরণ, ক্রীতদাসে পরিণত করা এবং লোকদের বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা ছিল সাধারণ রেওয়াজ।২৯