একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকা ইসলামের পূর্বেও পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মেই বৈধ বলে বিবেচিত হতো। আরব, ভারতবর্ষ, ইরান, মিসর, গ্রীস, ব্যাবিলন, অষ্ট্রিয়া প্রভৃতি দেশে বসবাসকারী প্রতিটি জাতি ও সম্প্রদায়ের মাঝে বহু বিবাহের প্রথা প্রচলিত ছিল এবং এর প্রাকৃতিক প্রয়োজনীয়তার কথা আজও কেউ অস্বীকার করতে পারে না। বর্তমান যুগে ইউরোপের লোকেরা তাদের পূর্ব পুরুষের বিপরীতে বহু বিবাহকে অবৈধ ঘোষণা করার প্রয়াস চালিয়েছে, কিন্তু তাতে তারা সফল হতে পারেনি। পরিশেষে প্রাকৃতিক নিয়মনীতি বিজয়ী হয়েছে এবং এখন তো বহু বিবাহের প্রথটিকেই চালু করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
মিস্টার ডেভিন পোর্ট একজন প্রখ্যাত খ্রিস্টান পণ্ডিত। তিনি বহু বিবাহের স্বপক্ষে \’ইনজীল\’ গ্রন্থের বেশ অনেকগুলো আয়াত উল্লেখ করার পর লিখছেন, \”এ আয়াতগুলো থেকে যে বক্তব্য মিলে তা হচ্ছে, বহু বিবাহ শুধু যে পছন্দের তা নয় বরং আল্লাহ তা\’আলা তাতে বিশেষ বরকতও দিয়েছেন।\” (১)
অবশ্য এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ইসলাম-পূর্ব যুগে বহু বিবাহের কোনো সীমা কিংবা সংখ্যা নির্ধারিত ছিল না। ফলে এক একজন পুরুষের অধীনে হাজার হাজার মহিলাও থাকত।(২)
খ্রিস্টান পাদ্রীরা সবসমই বহু বিবাহে অভ্যস্ত ছিল। ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত জার্মানীতে এর ব্যাপক প্রচলন ছিল। কনস্টান্টিনোপলের সম্রাট এবং তাঁর উত্তরাধিকারীদের সকলেরই বহু সংখ্যক স্ত্রী ছিল।
এমনিভাবে বৈদিক শিক্ষায় কোনো সংখ্যা বা সীমারেখা ব্যতীত বহু বিবাহ বৈধ। তাই, এ শিক্ষায় দশজন করে, তেরজন করে, সাতাশজন করে স্ত্রীকে একই সাথে একই সময়ে একত্র করা বৈধ বলে বুঝা যায়। (৩)
মোটকথা, ইসলামের পূর্বে একাধিকবিবাহ সীমাহীন অবস্থায় প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন ধর্ম ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, কোনো ধর্মে এবং কোনো দেশের আইনে বহু বিবাহের কোনো সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়নি। না ইহুদি, খ্রিস্টান, না হিন্দু, না আর্য কিংবা পারসিক কেউ তা করেনি।
ইসলামের প্রাথমিক যুগেও এ প্রথা এমনিভাবে সীমা নির্ধারণ না করেই প্রচলিত ছিল। ফলে কোনো কোনো সাহাবীর চারের অধিক স্ত্রী ছিলেন। হযরত খাদীজা (রা.)-এর ইন্তেকালের পর বিশেষ ইসলামি প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর বিবাহ বন্ধনেও একসাথে দশজন স্ত্রী পর্যন্ত একত্র হয়েছেন।
পরবর্তীতে যখন দেখা গেল যে, বহু বিবাহের কারণে মহিলাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে, মানুষ প্রথমে লোভের বশবর্তী হয়ে অনেকগুলো বিবাহ করে, কিন্তু পরে তাদের সকলের অধিকার ও চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করতে পারে না, তখন পবিত্র কুরআন শরীফের চিরন্তন বিধান, যা পৃথিবী হতে অত্যাচার আর নির্যাতন-নিপীড়ন নিঃশেষ করার জন্যই অবতীর্ণ হয়েছে,, তা মানুষের স্বভাবজাত প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে যদিও একাধিক স্ত্রী গ্রহণকে একেবারে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেনি, তবে তার অনিষ্ট ও কুফল থেকে বেঁচে থাকার লক্ষ্যে একটি সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা\’আলা বলেন-
فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً
উপরিউক্ত আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে- এখন থেকে তোমরা চারজন পর্যন্ত মহিলাকে একসাথে স্ত্রী হিসেবে রাখতে পারবে, তবে তা এ শর্তে যে, তোমরা চারজনেরই অধিকার পুরোপুরিভাবে আদায় করবে। যদি এতটুকু সাহস ও ক্ষমতা না থাকে, তাহলে একজনের অধিক মহিলাকে বিয়ে করা অন্যায় ও জুলুম।
আল্লাহ তা\’আলার এ ঘোষণার পর চারের অধিক স্ত্রীকে একত্রে রাখা উম্মতের ঐক্যমতে হারাম হয়ে যায়। ফলে যে সকল সাহাবীর অধীনে চারের অধিক স্ত্রী ছিলেন, তাঁরা চারজনকে রেখে অতিরিক্ত সংখ্যাক মহিলাদের তালাক প্রদান করেন। হাদীস শরীফে আছে, হযরত গায়লান (রা.) যখন মুসলমান হন, তখন তাঁর স্ত্রী হিসেবে দশজন মহিলা ছিল। নবী করীম (সাঃ) তাঁকে নির্দেশ দিলেন, তুমি চারজন রেখে অন্যদের তালাক দিয়ে দাও। এমনিভাবে হযরত নওফল ইবনে মু\’আবিয়া (রা.) যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন তাঁর পাঁচজন স্ত্রী ছিলেন। রাসূলে মাকবুল (সাঃ) তাদের একজনকে তালাক দেওয়ার নির্দেশ দেন। [তাফসীরে কাবীর, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৩৭]
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর \’আযওয়াজে মুতাহ্হারাত\’ (পূত পবিত্র স্ত্রীগণ) ও এই সাধারণ আইন অনুসারে চারজনের অধিক না থাকা উচিত ছিল। কিন্তু সাথে সাথে এ বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য যে, \’উম্মাহাতুল মু\’মিনীন (মুমিনদের মাতৃবর্গ) অন্য সকল মহিলার মতো নন। এ সম্পর্কে স্বয়ং কুরআন মাজীদের ঘোষণা হচ্ছে-
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ
\”হে নবী-পত্নীগণ! তোমরা অন্য কোনো মহিলার মতো নও।\”
তাঁরা হলেন উম্মতের সকলের মাতা। তাই নবী করীম (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর তাঁরা আর কোনো পুরুষের বিবাহধীনে আসতে পারেন না। তখন যদি সাধারণ বিধান অনুসারে \’আযওয়াজে মুতাহ্হারাতের মধ্য হতে চারজনকে রেখে অবশিষ্টদের তালাক দিয়ে পৃথক করে দেওয়া হতো, তাহলে তাঁদের উপর কত বড় অত্যাচারই না করা হতো! তাঁদের অবশিষ্ট বীজন নিঃসঙ্গভাবে কাটাতে হতো, রাহমাতুললিল আলামীনের \’কিছু দিনের সাহচর্স\’ তাঁদের জন্য এক মহাশাস্তি হয়ে যেত। একদিকে বিশ্বজগতের গৌরব হুযূরে আকরাম (সাঃ) এর সান্নিধ্যও হারাতেন, অন্যদিকে তাঁদের এ অনুমতিও থাকতনা যে, তাঁরা অন্য কোথাও তাঁদের দুঃখ লাঘব করতে পারেন।
তাই, \’আযওয়াজে মুতাহ্হারাতকে এ সাধারণ বিধানের অধীনে আনা কোনোভাবেই সঙ্গত ছিল না। বিশেষ করে সে সমস্ত মহিলা, যাদের সাথে নবী করীম (সাঃ) এর বিয়ে এজন্য সংঘটিত হয়েছিল যে, তাঁদের পূর্ব- স্বামী জিহাদের ময়দানে শহীদ হয়ে গেছেন এবং তার ফলে তাঁরা সহায় সম্বলহীন অবস্থঅয় দিন কাটাচ্ছেন। হুযূরে আকরাম (সাঃ) তাদেঁর মনোতুষ্টির জন্য তাঁদেরকে বিয়ে করেন। এখন যদি তাঁদের তালাক দিয়ে বিচ্ছিন্ন করতে হতো, তাহলে তাঁদের কি অবস্থা হতো? এটা কেমন মনোতুষ্টি হতো, যখন সারাজীবনের জন্য তাঁদের বিয়ে থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া হতো?
তাই, শরিয়তের বিধানে চারের অধিক স্ত্রী রাখা শুধুমাত্র নবী করীম (সাঃ) এর বৈশিষ্ট্য বলে গণ্য হলো। তাছাড়া, নবীজীর পারিবারিক জীবনের বিভিন্ন অবস্থা, যা উম্মতের সকলের জন্য জাগতিক ও পারলৌকিক সকল কাজকর্মের জন্য বিধিবদ্ধ আইন ও আদর্শ, তা নবী-পত্নীগণের মাধ্যমেই একমাত্র আমাদের নিকট পৌছতে পারে। এটা এমন এক প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য যে, তার জন্য নয়জন স্ত্রীও যথেষ্ট নয়।
এসকল অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর কোনো লোক কি একথা বলতে পারে যে, নবী করীম (সাঃ) এর এ বৈশিষ্ট্য (নাউযুবিল্লাহ) কোনো জৈবিক চাহিদার ভিত্তিতে হয়েছিল?
সেই সাথে এ বিষয়টিও লক্ষ্যযোগ্য যে, সে সময় সমগ্র আরব ও আজম নবী করীম (সাঃ) এর বিরোধীতায় উঠে পড়ে লেগেছিল, তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনাও আঁটছিল, নানা ধরনের দোষ দিচ্ছিল, অবরাদ ছুঁড়ছিল, (নাউযুবিল্লাহ) পাগল বলছিল, মিথ্যুক বলছিল। মোটকথা, তারা এ প্রখর-দীপ্ত সূর্যের প্রতি ধূলি নিক্ষেপ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে নিজেরাই লাঞ্ছিত ও অপমাণিত হয়েছে। এসবকিছুই কাফেররা করেছে, কিন্তু কোনো কাফের কি কখনো নবী করীম (সাঃ) এর বিরুদ্ধে জৈবিক লালসা চরিতার্থ করা বা নারীঘটিত বিষয় নিয়ে কোনো অভিযোগ-অপবাদ দিতে পেরেছে? না, কখনোই না। এখানে মিথ্যা রটনার কোনো সামান্য সুযোগও তারা পায়নি। নয়তো কোনো সম্মানিত ব্যক্তিকে নিন্দার পাত্র বানানোর জন্য এর চেয়ে বড় আর কোনো হাতিয়ার হতে পারে না। যদি নবী করীম (সাঃ) এর মর্যাদায় আঘাত করার সামান্য সুযোগ তারা পেত, তাহলে আরবের কাফের সম্প্রদায়, যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ঘরের খবরও জানত, তারা সবচেয়ে বেশি বাড়িয়ে-চড়িয়ে সেটাকে তাঁর দোষ-ত্রুটির মাঝে গণ্য করত। কিন্তু তরা এতটা মুথ্য কখনোই ছিল না যে, এ সম্পর্কিত বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাত হবে।
কেননা, তাক্ওয়া ও আল্লাহভীতির মূর্ত প্রতীক হুযূর আকরাম (সাঃ) এর পবিত্র জীবনধারা সর্বসাধারণের সামনে উপস্থিত ছিল। তাতে তারা দেখেছে, তিনি তাঁর যৌবনকালের এক বিরাট অংশ শুধুমাত্র নির্জনতা ও একাকিত্বের মধ্যে কাটিয়ে দিয়েছেন। এরপর যখন নবী করীম (সাঃ) এর বয় পঁচিশ বছরে উপনীত হয়েছে, তখন হযরত খাদীজা (রা.) এর পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। তিনি তখন বিধবা এবং সন্তানবতী হওয়ার সাথে সাথে চল্লিশ বছর বয়সে বার্ধর্ক্যের জীবন যাপন করছিলেন। হুযূরে আকরাম (সাঃ) এর সাথে বিয়ে হওয়ার আগে তিনি দুজন স্বামীর ঘর করেছেন এবং সে সময় দুই পুত্র ও তিন কন্যার জননী ছিলেন। -[সীরাতে মুগলতাই: পৃষ্ঠা-১২]
নবুয়তের আশ্রয়স্থল রাসূলে মাকবুল (সাঃ) এর দরবারে তাঁর বিবাহের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যাত হয়নি। পরে তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি এ বিয়েতেই কাটিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, হযরত খাদীজা (রা.) কে ঘরে রেখে হেরা পাহাড়ের নির্জনগুহায় তিনি দীর্ঘ এক একটি মাস পর্যন্ত শুধু আল্লাহ তা\’আলার ইবাদতে মগ্ন থেকেছেন। জীবনের এক বিরাট অংশ তিনি এই বিয়েতে কাটিয়েছেন, তাই তাঁর যে ক\’জন সন্তান জন্ম নিয়েছেন, তাদের সবাই ছিলেন হযরত খাদীজা (রা.) এর গর্ভজাত।
অবশ্য হযরত খাদীজা (রা.) এর ইন্তেকালের পর, যখন নবী করীম (সাঃ) এর বয়স পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করে গিয়েছিল, তখন উপরিউক্ত অন্যসব বিয়ে সংঘটিত হয় এবং শরিয়তের বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে তিনি দশজন পর্যন্ত মহিলাকে তাঁর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন। হযরত আয়েশা (রা.) ব্যতীত তাদেঁর সবাই ছিলেন বিধবা এবং কারো কারো সন্তানাদিও ছিল।
এসব অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে আমি মনে করি না যে, কোনো সুস্থ্য ও বিবেকবান ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ) এর এ বহু বিবাহকে (নাউযুবিল্লাহ) জৈবিক তাড়নার ফলশ্রুতি বলে মন্তব্য করবে। যদি কোনো রাতকানা নবুয়ত-সূর্যের মাহাত্ম ও তেজোদীপ্তিকেও দেখতে না পায় এবং নবী করীম (সাঃ) এর চরিত্র কর্ম, আল্লাহ-ভীতি, পাক-পবিত্রতা, দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও আখেরাতমুখীতা, আধাত্মিক সাধনা এবং পুতঃপবিত্র জীবনের প্রতিটি পারিপার্শ্বিক অবস্থা ইত্যাদি থেকেও যদি সে চোখ ফিরিয়ে রাখে, তাহলেও একাধিক বিয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন ঘটনা এবং অবস্থাই তাকে একথা বলতে বাধ্য করবে যে, এবহু বিবাহ অবশ্যই কোনো জৈবিক লোভ-লালসার বশবর্তী হয়ে করা হয়নি। তা না হলে সারাটা বীজন একজন বয়স্ক মহিলার সাথে কাটিয়ে দিয়ে প্রায় পঞ্চান্ন বছর বয়সকে এ (একাধিক বিয়ের) কাজের জন্য নির্ধারণ করা কোনো সুস্থ বিবেক মেনে নিতে পারে না। বিশেষ করে যখন আরবের কাফের এবং কুরাইশ নেতৃবর্গ নবী করীম (সাঃ) এর সামান্য ইঙ্গিত পেলেই তাদের নির্বাচিত সেরা সুন্দরী রমণীকে নবীজীর পদতলে উৎসর্গ করে দিতে প্রস্তুতও ছিল। ইতিহাস ও জীবনচরিত্রের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য পুস্তকে এর বহু প্রমাণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। -[সীরাতে মুগলতাই, পৃষ্ঠা-১২]
কাফেরদের এ প্রস্তাব- প্রসঙ্গ আলোচনা না করলেও বলা যায় যে, মুসলমানদের সংখ্যা তখন লাখের কোঠা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। তাদের মাঝে যে সকল বিবাহযোগ্য মহিলা ছিলেন, তাদের প্রত্যেকেই নবী করীম (সাঃ) এর স্ত্রী হওয়াকে বাস্তবিকপক্ষেই দোজাহানের কামিয়াবি ও সফলতা বলে মনে করতেন। এতসব কিছুর পরও রাসূলে আকরাম (সাঃ) পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত শুধু হযরত খাদীজা (রা.) কেই স্ত্রী হিসেবে রাখেন। অথচ হযরত খাদীজা (রা.) এর বয়স বিবাহকালে ছিল চল্লিশ বছর। তাঁর মৃত্যুর পর যাদের তিঁনি বিয়ের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন, তাদেরও একজন ব্যতীত আর সবাই ছিলেন বিধবা এবং সন্তানের মাতা। অথচ মুসলমান উম্মতের অসংখ্য কুমারী কন্যা থাকা সত্ত্বেও তাদের স্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়নি।
এ সংক্ষিপ্ত পুস্তিকায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযাগ নেই। নয়তো দেখানো সম্ভব হতো, হুযূর আকরাম (সাঃ) এর প্রতিটি বিবাহ কতখানি ইসলামি ও শরয়ী প্রয়োজনের ভিত্তিতে সংঘটিত হয়েছিল। তাছাড়া যদি তিনি একাধিক বিয়ে না করতেন , তাহলে সে সকল বিধি-বিধান যেগুলো মহিলাদের মাধ্যমেই একমাত্র উম্মতের সকলের পক্ষে জানা সম্ভব সেগুলোর অধিকাংশই অপ্রকাশিত ও গোপন থেকে যেত। (৪)
হযরত রাসূলে মাকবুল (সাঃ) এর এ বহু বিবাহকে জৈবিক চাহিদা ও ভোগ-বিলাস বলে আখ্যা দেওয়া কি পরিমাণ নির্লজ্জতা ও সত্যের অপলাপ! যদি বাতিলের অন্ধ অনুসরণ জ্ঞান, বুদ্ধি লোপ করে না দেয়, তাহলে কোনো কাফেরও এমন মিথ্যা অপবাদ দিতে পারে না।
নবী করীম (সাঃ) মৃত্যুকালে নয়জন স্ত্রী রেখে যান। তাঁর ইন্তেকালের পর \’আযওয়াজে মুতাহ্হারাত\’ (পুতঃপবিত্র পত্নীগণ)-এর মধ্যে সর্বপ্রথম মারা যান হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ (রা.) এবং সর্বশেষ মারা যান হযরত উম্মে সালামা (রা.)।