হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ (রা.)
তিঁনি ছিলেন নবী করীম (সাঃ) এর ফুফাতো বোন। নবীজী (সাঃ) হযরত যয়নাব (রা.) কে হযরত যায়েদ ইবনে হারিছা (রা.) এর সাথে বিয়ে দিতে মনস্থ করলেন। হযরত যায়েদ (রা.) ছিলে হুযূরে আকরাম (সাঃ) এর আজাদকৃত গোলাম; আজাদ করার পর তিঁনি তাঁকে পালক ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেন। যেহেতু হযরত যায়েদ (রা.) এর উপর \’গোলাম\’ শব্দটি একবার আরোপিত হয়েছিল, তাই হযরত যয়নাব (রা.) এ বৈবাহিক সম্বন্ধকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নবী করীম (সাঃ) এর আদেশ পালনার্থে তিনি বিয়েতে সম্মতি প্রকাশ করেন। প্রায় এক বছর তিঁনি হযরত যায়েদ (রা.) এর স্ত্রী হিসেবে থাকেন। কিন্তু যেহেতু মানসিকভাবে উভয়ের মাঝে বনিবনা ছিল না, তাই সব সময় মনোমালিন্য লেগেই থাকত। এমনকি হযরত যায়েদ (রা.) হুযূরে আকরাম (সাঃ) এর নিকট এসে তাঁকে তালাক দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন। কিন্তু যখন কোনোভাবেই তাঁদের মাঝে বনিবনা হলো না, তখন হযরত যায়েদ (রা.) বাধ্য হয়ে তাঁকে তালাক প্রদান করলেন।
যখন হযরত যায়নাব (রা.) এ বিয়ে থেকে মুক্ত হলেন, তখন রাসূলে মাকবুল (সাঃ) তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এবং তাঁর মন রাখতে তাঁকে বিয়ে করতে চাইলেন। কিন্তু তখনো আরবের সাধারণ লোকের ধারণায় পোষ্যপুত্রকে ঔরসজাত সন্তানের মতো মনে করা হতো। তাই সাধারণ মানুষের মনোভাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে নবী করীম (সাঃ) এ বিয়ে থেকে বিরত ছিলেন। কেননা, হয়তো লোকেরা বলাবলি করবে যে, তিনি নিজ পুত্রবধূকে বিয়ে করেছেন।
কিন্তু এটি ছিল অন্ধকার যুগের একটি কুসংস্কার মাত্র। একে নির্মূল করা ইসলামের একটি অপরিহার্য কর্তব্য। তাই এ সম্পকে কুরআন পাকের আয়াত নাজিল হলো- وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللَّهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَاهُ
\”তোমরা কি লোকদের ভয় করছো, অথচ ভয় করা উচিত একমাত্র আল্লাহকে। -সুলা আহযাব)
তাই হিজরী ৪র্থ সনে এবং কোনো কোনো রেওয়ায়েত অনুযায়ী ৩য় বা ৫ম সনে বিশ্ব-পালনকর্তা আল্লাহ তা\’আলার নির্দেশ মেনে হুযূরে আকরাম (সাঃ) নিজে হযরত যয়নাব (রা.) কে বিয়ে করলেন। এর ফলে লোকেরা বুঝতে পারবে যে, পালক-ছেলে ঔরসজাত সন্তানের সমতুল্য নয়, তাই পালক-পুত্রের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর তার স্ত্রী পালক- পিতার জন্য হারাম হয় না। যারা আল্লাহ তা\’আলার এ হালালটিকে আকীদা হিসেবে বা কর্যক্ষেত্রে হারাম করে রেখেছে, তারা যেন ভবিষ্যতে এ ভুল থেকে বের হয়ে আসে এবং অন্ধকার যুগের এ কুপ্রথা যেন চিরতরে উৎপাটিত হয়ে যায়- এটাই ছিল এ বিয়ের উদ্দেশ্য। এ প্রাচীন কুসংস্কারটির উৎপাটন তখনই সম্ভব ছিল, যখন নবী করীম (সাঃ) স্বয়ং কাজের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত করে দেখাবেন।
হযরত যয়নাব (রা.) এর বিয়ে সম্পর্কে আমি যা কিছু লিখেছি, তা অত্যন্ত বিশুদ্ধ ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী লিখেছি। এ সম্পর্কিত বিশুদ্ধ হাদীসগুলোকে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার হাফিজুল হাদীস আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (র.) তাঁর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে সংকলিত করেছেন -[দ্রষ্টব্য ফাতহুল বারী, সূরা আহযাবের তাফসীর]
এগুলো ছাড়া অন্য যে সকল ভ্রান্ত রেওয়ায়েত প্রচার করা হয়েছে সেগুলো মুনাফিক ও কাফেরদের মনগড়া কাহিনী, যেগুলোকে কোনো কোনো মুসলমান ঐতিহাসিকও কোনো ধরনের যাচাই, বাছাই না করে নিজ নিজ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, অথচ এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা রটনা ও অপবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়।